24-1 : ইহা একটি সূরা, ইহা আমি অবতীর্ণ করিয়াছি এবং ইহার বিধান - কে অবশ্যপালনীয় করিয়াছি, ইহাতে আমি অবতীর্ণ করিয়াছি সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ যাহাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর। |
24-2 : ব্যভিচারিণী ও ব্যভিচারী - উহাদের প্রত্যেককে এক শত কশাঘাত করিবে, আল্লাহ্র বিধান কার্যকরীকরণে উহাদের প্রতি দয়া যেন তোমাদেরকে প্রভাবান্বিত না করে, যদি তোমরা যদি তোমরা আল্লাহে এবং পরকালে বিশ্বাসী হও; মু’মিনদের একটি দল যেন ইহাদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে। |
24-3 : ব্যভি - চারী - ব্যভিচারিণীকে অথবা মুশরিক নারীকে ব্যতীত বিবাহ করে না এবং ব্যভিচারিণী - তাহাকে ব্যভিচারী অথবা মুশরিক ব্যতীত কেহ বিবাহ করে না, মু’মিনদের জন্য ইহা নিষিদ্ধ করা হইয়াছে। |
24-4 : যাহারা সাধ্বী রমণীর প্রতি অপবাদ আরোপ করে এবং চার জন সাক্ষী উপস্থিত করে না, তাহাদেরকে আশিটি কশাঘাত করিবে এবং কখনও তাহাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করিবে না; ইহারাই তো সত্যত্যাগী। |
24-5 : তবে যদি ইহার পর উহারা তওবা করে ও নিজেদেরকে সংশোধন করে, আল্লাহ্ তো অতিশয় ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। |
24-6 : এবং যাহারা নিজেদের স্ত্রীর প্রতি অপবাদ আরোপ করে অথচ নিজেরা ব্যতীত তাহাদের কোন সাক্ষী নাই, তাহাদের প্রত্যেকের সাক্ষ্য এই হইবে যে, সে আল্লাহ্র নামে চার বার শপথ করিয়া বলিবে যে, সে অবশ্যই সত্যবাদী, |
24-7 : এবং পঞ্চমবারে বলিবে যে, সে মিথ্যাবাদী হইলে তাহার উপর নামিয়া আসিবে আল্লাহর লা‘নত। |
24-8 : তবে স্ত্রীর শাস্তি রহিত হইবে যদি সে চারবার আল্লাহ্র নামে শপথ করিয়া সাক্ষ্য দেয় যে, তাহার স্বামীই মিথ্যাবাদী, |
24-9 : এবং পঞ্চমবারে বলে যে, তাহার স্বামী সত্যবাদী হইলে তাহার নিজের উপর নামিয়া আসিবে আল্লাহ্র গযব। |
24-10 : তোমাদের প্রতি আল্লাহ্র অনুগ্রহ ও দয়া না থাকিলে তোমাদের কেহই অব্যাহতি পাইতে না; এবং আল্লাহ্ তওবা গ্রহণকারী ও প্রজ্ঞাময়। |
24-11 : যাহারা এই অপবাদ রচনা করিয়াছে তাহারা তো তোমাদেরই একটি দল; ইহাকে তোমরা তোমাদের জন্য অনিষ্টকর মনে করিও না; বরং ইহা তো তোমাদের জন্য কল্যাণকর; উহাদের প্রত্যেকের জন্য আছে উহাদের কৃত পাপকর্মের ফল এবং উহাদের মধ্যে যে এই ব্যাপারে প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করিয়াছে, তাহার জন্য আছে মহাশাস্তি। |
24-12 : যখন তাহারা ইহা শুনিল তখন মু’মিন পুরুষ এবং মু’মিন নারীগণ আপন লোকদের সম্পর্কে কেন ভাল ধারণা করিল না এবং বলিল না, ‘ইহা তো সুস্পষ্ট অপবাদ!’ |
24-13 : তাহারা কেন এই ব্যাপারে চারজন সাক্ষী উপস্থিত করে নাই ? যেহেতু তাহারা সাক্ষী উপস্থিত করে নাই, সে কারণে তাহারা আল্লাহ্র নিকট মিথ্যাবাদী। |
24-14 : দুনিয়া ও আখিরাতে তোমাদের প্রতি আল্লাহ্র অনুগ্রহ ও দয়া না থাকিলে, তোমরা যাহাতে লিপ্ত ছিলে তজ্জন্য মহাশাস্তি অবশ্যই তোমাদেরকে স্পর্শ করিত, |
24-15 : যখন তোমরা মুখে মুখে ইহা ছড়াইতেছিলে এবং এমন বিষয় মুখে উচ্চারণ করিতেছিলে যাহার কোন জ্ঞান তোমাদের ছিল না এবং তোমরা ইহাকে তুচ্ছ গণ্য করিয়াছিলে, যদিও আল্লাহ্র নিকট ইহা ছিল গুরুতর বিষয়। |
24-16 : এবং তোমরা যখন ইহা শ্রবণ করিলে তখন কেন বলিলে না, ‘এ বিষয়ে বলাবলি করা আমাদের উচিত নয়; আল্লাহ্ পবিত্র, মহান। এটা তাে এক গুরুতর অপবাদ!’ |
24-17 : আল্লাহ্ তোমাদেরকে উপদেশ দিতেছেন, ‘তোমরা যদি মু’মিন হও তবে কখনও অনুরূপ আচরণের পুনরাবৃত্তি করিও না।’ |
24-18 : আল্লাহ্ তোয়াদের জন্য আয়াতসমূহ সুস্পষ্টভাবে বিবৃত করেন এবং আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। |
24-19 : যাহারা মু’মিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে তাহাদের জন্য আছে দুনিয়া ও আখিরাতের মর্মন্তুদ শাস্তি এবং আল্লাহ্ জানেন, তােমরা জান না। |
24-20 : তোমাদের প্রতি আল্লাহ্র অনুগ্রহ ও দয়া না থাকিলে তোমাদের কেহই অব্যাহতি পাইতে না এবং আল্লাহ্ দয়ার্দ্র ও পরম দয়ালু। |
24-21 : হে মু’মিনগণ! তোমরা শয়তানের পদাংক অনুসরণ করিও না। কেহ শয়তানের পদাংক অনুসরণ করিলে শয়তান তো অশ্লীলতা ও মন্দ কাজের নির্দেশ দেয়। আল্লাহ্র অনুগ্রহ ও দয়া না থাকিলে তোমাদের কেহই কখনও পবিত্র হইতে পারিতে না, তবে আল্লাহ্ যাহাকে ইচ্ছা পবিত্র করিয়া থাকেন এবং আল্লাহ্ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। |
24-22 : তোমাদের মধ্যে যাহারা ঐশ্বর্য ও প্রাচুর্যের অধিকারী তাহারা যেন শপথ গ্রহণ না করে যে, তাহারা আত্মীয় - স্বজন ও অভাবগ্রস্তকে এবং আল্লাহ্র রাস্তায় যাহারা হিজরত করিয়াছে তাহাদেরকে কিছুই দিবে না; তাহারা যেন উহাদেরকে ক্ষমা করে এবং উহাদের দোষত্রুটি উপেক্ষা করে। তোমরা কি চাও না যে, আল্লাহ্ তোমাদেরকে ক্ষমা করুন ? এবং আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। |
24-23 : যাহারা সাধ্বী, সরলমনা ও ঈমানদার নারীর প্রতি অপবাদ আরোপ করে তাহারা দুনিয়া ও আখিরাতে অভিশপ্ত এবং তাহাদের জন্য আছে মহাশাস্তি। |
24-24 : যেই দিন তাহাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবে তাহাদের জিহ্বা, তাহাদের হস্ত ও তাহাদের চরণ তাহাদের কৃতকর্ম সম্বন্ধে - |
24-25 : সেই দিন আল্লাহ্ তাহাদের প্রাপ্য প্রতিফল পুরাপুরি দিবেন এবং তাহারা জানিবে, আল্লাহ্ই সত্য, স্পষ্ট প্রকাশক। |
24-26 : দুশ্চরিত্রা নারী দুশ্চরিত্র পুরুষের জন্য; দুশ্চরিত্র পুরুষ দুশ্চরিত্রা নারীর জন্য; সচ্চরিত্রা নারী সচ্চরিত্র পুরুষের জন্য এবং সচ্চরিত্র পুরুষ সচ্চরিত্রা নারীর জন্য। লোকে যাহা বলে ইহারা তাহা হইতে পবিত্র; ইহাদের জন্য আছে ক্ষমা এবং সম্মানজনক জীবিকা। |
24-27 : হে মু’মিনগণ! তোমরা নিজেদের গৃহ ব্যতীত অন্য কাহারও গৃহে গৃহবাসীদের অনুমতি না লইয়া এবং তাহাদেরকে সালাম না করিয়া প্রবেশ করিও না। ইহাই তোমাদের জন্য শ্রেয়, যাহাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর। |
24-28 : যদি তোমরা গৃহে কাহাকেও না পাও তাহা হইলে উহাতে প্রবেশ করিবে না যতক্ষণ না তোমাদেরকে অনুমতি দেওয়া হয়। যদি তোমাদেরকে বলা হয়, ‘ফিরিয়া যাও’, তবে তোমরা ফিরিয়া যাইবে, ইহাই তোমাদের জন্য উত্তম, এবং তোমরা যাহা কর সে সম্বন্ধে আল্লাহ্ সবিশেষ অবহিত। |
24-29 : যে গৃহে কেহ বাস করে না তাহাতে তোমাদের জন্য দ্রব্যসামগ্রী থাকিলে সেখানে তোমাদের প্রবেশে কোনও পাপ নাই এবং আল্লাহ্ জানেন যাহা তোমরা প্রকাশ কর এবং যাহা তোমরা গোপন কর। |
24-30 : মু’মিনদেরকে বল, তাহারা যেন তাহাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাহাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে; ইহাই তাহাদের জন্য উত্তম। উহারা যাহা করে নিশ্চয় আল্লাহ্ সে বিষয়ে সম্যক অবহিত। |
24-31 : আর মু’মিন নারীদেরকে বল, তাহারা যেন তাহাদের দৃষ্টিকে সংযত করে ও তাহাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে; তাহারা যেন যাহা সাধারণত প্রকাশ থাকে তাহা ব্যতীত তাহাদের আভরণ প্রদর্শন না করে, তাহাদের গ্রীবা ও বক্ষদেশ যেন মাথার কাপড় দ্বারা আবৃত করে, তাহারা যেন তাহাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুষ্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, আপন নারীগণ, তাহাদের মালিকানাধীন দাসী, পুরুষদের মধ্যে যৌন কামনা - রহিত পুরুষ এবং নারীদের গোপন অঙ্গ সম্বন্ধে অজ্ঞ বালক ব্যতীত কাহারও নিকট তাহাদের আভরণ প্রকাশ না করে, তাহারা যেন তাহাদের গোপন আভরণ প্রকাশের উদ্দেশ্যে সজোরে পদক্ষেপ না করে। হে মু’মিনগণ! তোমরা সকলে আল্লাহ্র দিকে প্রত্যাবর্তন কর, যাহাতে তোমরা সফলকাম হইতে পার। |
24-32 : তোমাদের মধ্যে যাহারা ‘আয়্যিম’ তাহাদের বিবাহ সম্পাদন কর এবং তোমাদের দাস ও দাসীদের মধ্যে যাহারা সৎ তাহাদেরও। তাহারা অভাবগ্রস্ত হইলে আল্লাহ্ নিজ অনুগ্রহে তাহাদেরকে অভাবমুক্ত করিয়া দিবেন; আল্লাহ্ তো প্রার্চুযময়, র্সবজ্ঞ। |
24-33 : যাহাদের বিবাহের সামর্থ্য নাই, আল্লাহ্ তাহাদেরকে নিজ অনুগ্রহে অভাবমুক্ত না করা পর্যন্ত তাহারা যেন সংযম অবলম্বন করে এবং তোমাদের মালিকানাধীন দাস - দাসীদের মধ্যে কেহ তাহার মুক্তির জন্য লিখিত চুক্তি চাহিলে, তাহাদের সঙ্গে চুক্তিতে আবদ্ধ হও, যদি তোমরা উহাদের মধ্যে মঙ্গলের সন্ধান পাও। আল্লাহ্ তোমাদেরকে যে সম্পদ দিয়াছেন তাহা হইতে তোমরা উহাদেরকে দান করিবে। তোমাদের দাসিগণ, সতীত্ব রক্ষা করিতে চাহিলে পার্থিব জীবনের ধনলালসায় তাহাদেরকে ব্যভিচারিণী হইতে বাধ্য করিও না, আর যে তাহাদেরকে বাধ্য করে, তবে তাহাদের উপর জবরদস্তির পর আল্লাহ্ তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। |
24-34 : আমি তো তোমাদের নিকট অবতীর্ণ করিয়াছি সুস্পষ্ট আয়াত, তোমাদের পূর্ববর্তীদের দৃষ্টান্ত এবং মুত্তাকীদের জন্য উপদেশ। |
24-35 : আল্লাহ্ আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর জ্যোতি, তাঁহার জ্যোতির উপমা যেন একটি দীপাধার যাহার মধ্যে আছে এক প্রদীপ, প্রদীপটি একটি কাচের আবরণের মধ্যে স্থাপিত, কাচের আবরণটি উজ্জ্বল নক্ষত্রসদৃশ; ইহা প্রজ্বলিত করা হয় পূত - পবিত্র যায়তূন বৃক্ষের তৈল দ্বারা যাহা প্রাচ্যের নয়, প্রতীচ্যেরও নয়, অগ্নি উহাকে স্পর্শ না করিলেও যেন উহার তৈল উজ্জ্বল আলো দিতেছে; জ্যোতির উপর জ্যোতি! আল্লাহ্ যাহাকে ইচ্ছা পথনির্দেশ করেন তাঁহার জ্যোতির দিকে। আল্লাহ্ মানুষের জন্য উপমা দিয়া থাকেন এবং আল্লাহ্ সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞ। |
24-36 : সেই সকল গৃহে যাহাকে সমুন্নত করিতে এবং যাহাতে তাঁহার নাম স্মরণ করিতে আল্লাহ্ নির্দেশ দিয়াছেন, সকাল ও সন্ধ্যায় তাঁহার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে, |
24-37 : সেইসব লোক, যাহাদেরকে ব্যবসা - বাণিজ্য এবং ক্রয় - বিক্রয় আল্লাহ্র স্মরণ হইতে এবং সালাত কায়েম ও যাকাত প্রদান হইতে বিরত রাখে না, তাহারা ভয় করে সেই দিনকে যেই দিন অনেক অন্তর ও দৃষ্টি বিপর্যস্ত হইয়া পড়িবে - |
24-38 : যাহাতে তাহারা যে কর্ম করে তজ্জন্য আল্লাহ্ তাহাদেরকে উত্তম পুরস্কার দেন এবং নিজ অনুগ্রহে তাহাদের প্রাপ্যের অধিক দেন। আল্লাহ্ যাহাকে ইচ্ছা অপরিমিত জীবিকা দান করেন। |
24-39 : যাহারা কুফরী করে তাহাদের কর্ম মরুভূমির মরীচিকাসদৃশ, পিপাসার্ত যাহাকে পানি মনে করিয়া থাকে, কিন্তু সে উহার নিকট উপস্থিত হইলে দেখিবে উহা কিছু নয় এবং সে পাইবে সেখানে আল্লাহ্কে, অতঃপর তিনি তাহার কর্মফল পূর্ণ মাত্রায় দিবেন। আল্লাহ্ হিসাব গ্রহণে তৎপর। |
24-40 : অথবা তাহাদের কর্ম গভীর সমুদ্র তলের অন্ধকারসদৃশ, যাহাকে আচ্ছন্ন করে তরঙ্গের উপর তরঙ্গ, যাহার ঊর্ধ্বে মেঘপুঞ্জ, অন্ধকারপুঞ্জ স্তরের উপর স্তর, এমনকি সে হাত বাহির করিলে তাহা আদৌ দেখিতে পাইবে না। আল্লাহ্ যাহাকে জ্যোতি দান করেন না তাহার জন্য কোন জ্যোতিই নাই। |
24-41 : তুমি কি দেখ না যে, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যাহারা আছে তাহারা এবং উড্ডীয়মান বিহঙ্গকুল আল্লাহ্র পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে? প্রত্যেকেই জানে তাহার ‘ইবাদতের ও পবিত্রতা ঘোষণার পদ্ধতি এবং উহারা যাহা করে সে বিষয়ে আল্লাহ্ সম্যক অবগত। |
24-42 : আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সার্বভৌমত্ব আল্লাহ্রই এবং আল্লাহ্রই দিকে প্রত্যাবর্তন। |
24-43 : তুমি কি দেখ না, আল্লাহ্ সঞ্চালিত করেন মেঘমালাকে, তৎপর তাহাদেরকে একত্র করেন এবং পরে পুঞ্জীভূত করেন, অতঃপর তুমি দেখিতে পাও, উহার মধ্য হইতে নির্গত হয় বারিধারা; আকাশস্থিত শিলাস্তূপ হইতে তিনি বর্ষণ করেন শিলা এবং ইহা দ্বারা তিনি যাহাকে ইচ্ছা আঘাত করেন এবং যাহাকে ইচ্ছা তাহার উপর হইতে ইহা অন্য দিকে ফিরাইয়া দেন। মেঘের বিদ্যুৎ ঝলক দৃষ্টিশক্তি প্রায় কাড়িয়া নেয়। |
24-44 : আল্লাহ্ দিবস ও রাত্রির পরিবর্তন ঘটান, ইহাতে শিক্ষা রহিয়াছে অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্নদের জন্য। |
24-45 : আল্লাহ্ সমস্ত জীব সৃষ্টি করিয়াছেন পানি হইতে, উহাদের কতক পেটে ভর দিয়া চলে, কতক দুই পায়ে চলে এবং কতক চলে চার পায়ে, আল্লাহ্ যাহা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন, নিশ্চয় আল্লাহ্ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। |
24-46 : আমি তো সুস্পষ্ট নিদর্শন অবতীর্ণ করিয়াছি, আল্লাহ্ যাহাকে ইচ্ছা সরল সঠিক পথ প্রদর্শন করেন। |
24-47 : উহারা বলে, ‘আমরা আল্লাহ্ ও রাসূলের প্রতি ঈমান আনিলাম এবং আমরা আনুগত্য স্বীকার করিলাম’, কিন্তু ইহার পর উহাদের একদল মুখ ফিরাইয়া নেয়; বস্তুত উহারা মু’মিন নয়। |
24-48 : এবং যখন উহাদেরকে আহ্বান করা হয় আল্লাহ্ ও তাঁহার রাসূলের দিকে উহাদের মধ্যে ফয়সালা করিয়া দিবার জন্য তখন উহাদের একদল মুখ ফিরাইয়া নেয়। |
24-49 : আর যদি উহাদের প্রাপ্য থাকে তাহা হইলে উহারা বিনীতভাবে রাসূলের নিকট ছুটিয়া আসে। |
24-50 : উহাদের অন্তরে কি ব্যাধি আছে, না উহারা সংশয় পোষণ করে? না উহারা ভয় করে যে, আল্লাহ্ ও তাঁহার রাসূল উহাদের প্রতি জুলুম করিবেন? বরং উহারাই তো জালিম। |
24-51 : মু’মিনদের উক্তি তো এই - যখন তাহাদের মধ্যে ফয়সালা করিয়া দিবার জন্য আল্লাহ্ এবং তাঁহার রাসূলের দিকে আহ্বান করা হয় তখন তাহারা বলে, ‘আমরা শ্রবণ করিলাম ও আনুগত্য করিলাম।’ আর উহারাই তো সফলকাম। |
24-52 : যাহারা আল্লাহ্ ও তাঁহার রাসূলের আনুগত্য করে, আল্লাহ্ কে ভয় করে ও তাঁহার অবাধ্যতা হইতে সাবধান থাকে তাহারাই সফলকাম। |
24-53 : উহারা দৃঢ়ভাবে আল্লাহ্র শপথ করিয়া বলে যে, তুমি উহাদেরকে আদেশ করিলে উহারা অবশ্যই বাহির হইবে; তুমি বল, ‘শপথ করিও না, যথার্থ আনুগত্যই কাম্য। তোমরা যাহা কর নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সে বিষয়ে সবিশেষ অবহিত।’ |
24-54 : বল, আল্লাহ্র আনুগত্য কর এবং রাসূলের আনুগত্য কর।’ অতঃপর যদি তোমরা মুখ ফিরাইয়া লও, তবে তাহার উপর অর্পিত দায়িত্বের জন্য সে - ই দায়ী এবং তোমাদের উপর অর্পিত দায়িত্বের জন্য তোমরাই দায়ী; এবং তোমরা তাহার আনুগত্য করিলে সৎপথ পাইবে, আর রাসূলের কাজ তো কেবল স্পষ্টভাবে পৌঁছাইয়া দেওয়া। |
24-55 : তোমাদের মধ্যে যাহারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে আল্লাহ্ তাহাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিতেছেন যে, তিনি অবশ্যই তাহাদেরকে পৃথিবীতে প্রতিনিধিত্ব দান করিবেন, যেমন তিনি প্রতিনিধিত্ব দান করিয়াছিলেন তাহাদের পূর্ববর্তীদেরকে এবং তিনি অবশ্যই তাহাদের জন্য প্রতিষ্ঠিত করিবেন তাহাদের দীনকে যাহা তিনি তাহাদের জন্য পসন্দ করিয়াছেন এবং তাহাদের ভয়ভীতির পরিবর্তে তাহাদেরকে অবশ্য নিরাপত্তা দান করিবেন। তাহারা আমার ‘ইবাদত করিবে, আমার কোন শরীক করিবে না, অতঃপর যাহারা অকৃতজ্ঞ হইবে তাহারা তো সত্যত্যাগী। |
24-56 : তোমরা সালাত কায়েম কর, যাকাত দাও এবং রাসূলের আনুগত্য কর, যাহাতে তোমরা অনুগ্রহভাজন হইতে পার। |
24-57 : তুমি কাফিরদেরকে পৃথিবীতে কখনো প্রবল মনে করিও না। উহাদের আশ্রয়স্থল দোযখ; কত নিকৃষ্ট এই পরিণাম! |
24-58 : হে মু’মিনগণ! তোমাদের মালিকানাধীন দাস - দাসিগণ এবং তোমাদের মধ্যে যাহারা বয়ঃপ্রাপ্ত হয় নাই তাহারা যেন তোমাদের কক্ষে প্রবেশ করিতে তিন সময়ের অনুমতি গ্রহণ করে, ফজরের সালাতের পূর্বে, দ্বিপ্রহরে যখন তোমরা তোমাদের পোশাক খুলিয়া রাখ তখন এবং ‘ইশার সালাতের পর; এই তিন সময় তোমাদের গোপনীয়তার সময়। এই তিন সময় ব্যতীত অন্য সময়ে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করিলে তোমাদের জন্য এবং তাহাদের জন্য কোন দোষ নাই। তোমাদের এক - কে অপরের নিকট তো যাতায়াত করিতেই হয়। এইভাবে আল্লাহ্ তোমাআদের নিকট তাঁহার নির্দেশ সুস্পষ্টভাবে বিবৃত করেন। আল্লাহ র্সবজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। |
24-59 : আর তোমাদের সন্তান - সন্ততি বয়ঃপ্রাপ্ত হইলে তাহারাও যেন অনুমতি প্রার্থনা করে যেমন অনুমতি প্রার্থনা করিয়া থাকে তাহাদের বয়োজ্যেষ্ঠগণ। এইভাবে আল্লাহ্ তোমাদের নিকট তাঁহার নির্দেশ সুস্পষ্টভাবে বিবৃত করেন। আল্লাহ র্সবজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। |
24-60 : বৃদ্ধা নারী, যাহারা বিবাহের আশা রাখে না, তাহাদের জন্য অপরাধ নাই, যদি তাহারা তাহাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করিয়া তাহাদের বহির্বাস খুলিয়া রাখে; তবে ইহা হইতে তাহাদের বিরত থাকাই তাহাদের জন্য উত্তম। আল্লাহ্ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। |
24-61 : অন্ধের জন্য দোষ নাই, খঞ্জের জন্য দোষ নাই, রুগ্নের জন্য দোষ নাই এবং তোমাদের নিজেদের জন্যও দোষ নাই আহার করা তোমাদের গৃহে অথবা তোমাদের পিতৃগণের গৃহে, মাতৃগণের গৃহে, ভ্রাতৃগণের গৃহে, ভগ্নিগণের গৃহে, পিতৃব্যদের গৃহে, ফুফুদের গৃহে, মাতুলদের গৃহে, খালাদের গৃহে অথবা সেইসব গৃহে যাহার চাবির মালিক তোমরা অথবা তোমাদের বন্ধুদের গৃহে। তোমরা একত্রে আহার কর অথবা পৃথক পৃথকভাবে আহার কর তাহাতে তোমাদের জন্য কোন অপরাধ নাই। তবে যখন তোমরা গৃহে প্রবেশ করিবে তখন তোমরা তোমাদের স্বজনদের প্রতি সালাম করিবে অভিবাদনস্বরূপ যাহা আল্লাহ্র নিকট হইতে কল্যাণময় ও পবিত্র। এইভাবে আল্লাহ্ তোমাদের জন্য তাঁহার নির্দেশ বিশদভাবে বিবৃত করেন যাহাতে তোমরা বুঝিতে পার। |
24-62 : মু’মিন তো তাহারাই যাহারা আল্লাহ্ এবং তাঁহার রাসূলে ঈমান আনে এবং রাসূলের সঙ্গে সমষ্টিগত ব্যাপারে একত্র হইলে তাহারা অনুমতি ব্যতীত সরিয়া পড়ে না; যাহারা তোমার অনুমতি প্রার্থনা করে তাহারাই আল্লাহ্ এবং তাঁহার রাসূলে বিশ্বাসী। অতএব তাহারা তাহাদের কোন কাজে বাহিরে যাইবার জন্য তোমার অনুমতি চাহিলে তাহাদের মধ্যে যাহাদেরকে ইচ্ছা তুমি অনুমতি দিও এবং তাহাদের জন্য আল্লাহ্র নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করিও। নিশ্চয় আল্লাহ্ পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। |
24-63 : রাসূলের আহ্বানকে তোমরা তোমাদের একে অপরের প্রতি আহ্বানের মত গণ্য করিও না; তোমাদের মধ্যে যাহারা অলক্ষ্যে সরিয়া পড়ে আল্লাহ্ তো তাহাদেরকে জানেন। সুতরাং যাহারা তাঁহার আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে তাহারা সতর্ক হউক যে, বিপর্যয় তাহাদের উপর আপতিত হইবে অথবা আপতিত হইবে তাহাদের উপর মর্মন্তুদ শাস্তি। |
24-64 : জানিয়া রাখ, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যাহা কিছু আছে তাহা আল্লাহ্রই; তোমরা যাহাতে ব্যাপৃত তিনি তাহা জানেন। যেদিন তাহারা তাঁহার নিকট প্রত্যার্বততি হইবে, সেদিন তিনি তাহাদেরকে জানাইয়া দিবেন তাহারা যাহা করিত। আল্লাহ্ সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞ। |