মদিনায় অবতীর্ণ, আয়াত সংখ্যা: ৩৮, রুকু সংখ্যা: ০৪এই সূরার আলোচ্যসূচি
|
47-1 : যারা কুফুরির পথ ধরেছে এবং আল্লাহর পথে বাধা সৃষ্টি করছে, তিনি ব্যর্থ করে দিয়েছেন তাদের সমস্ত কর্মকান্ড। |
47-2 : আর যারা ঈমান এনেছে এবং আমলে সালেহ্ করেছে আর মুহাম্মদের প্রতি যা (যে কিতাব) নাযিল করা হয়েছে তার প্রতি ঈমান এনেছে, আর তা তো তাদের প্রভুর পক্ষ থেকে মহাসত্য, তিনি তাদের থেকে দূরীভূত করে দেবেন তাদের মন্দ আমলগুলো এবং সংশোধন করে দেবেন তাদের অবস্থা। |
47-3 : এর কারণ হলো, যারা কুফুরি করে তারা অনুসরণ করে মিথ্যা - বাতিলের। আর যারা ঈমান আনে তারা ইত্তেবা (অনুসরণ) করে তাদের প্রভুর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ মহাসত্যের। এভাবেই আল্লাহ্ দৃষ্টান্ত দিয়ে থাকেন মানুষের জন্যে। |
47-4 : তোমরা যখন যুদ্ধে কাফিরদের মোকাবেলা করবে, তখন তাদের গর্দানে আঘাত করবে এবং তাদেরকে কচু কাটা করে ছাড়বে। অবশেষে যখন তোমরা তাদের পরাস্ত করবে, তখন তাদের কষে বাঁধবে। তারপর হয় দয়া, নয়তো মুক্তিপণ। তোমরা যুদ্ধ চালিয়ে যাবে, যতোক্ষণ না যুদ্ধ তার অস্ত্র নামিয়ে ফেলে। এটাই নিয়ম। আল্লাহ্ ইচ্ছা করলে তাদের শাস্তি দিতে পারতেন, কিন্তু তিনি চান তোমাদের একের দ্বারা অন্যকে পরীক্ষা করতে। আর যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়, তিনি কখনো তাদের আমল বিনষ্ট করেন না। |
47-5 : তিনি তাদের সঠিক পথে পরিচালিত করেন এবং সংশোধন করে দেন তাদের অবস্থা। |
47-6 : তিনি তাদের দাখিল করবেন জান্নাতে, যার পরিচয় তিনি তাদের জানিয়ে দিয়েছেন। |
47-7 : হে ঈমানদার লোকেরা! তোমরা যদি আল্লাহকে সাহায্য করো, তিনিও সাহায্য করবেন তোমাদের, এবং অটল অবিচল রাখবেন তোমাদের কদম। |
47-8 : আর যারা কুফুরি করেছে তাদের জন্যে রয়েছে দুর্দশা এবং তিনি ব্যর্থ করে দেবেন তাদের সমস্ত কর্মকান্ড। |
47-9 : এর কারণ, আল্লাহ্ যা (যে বিধান) অবতীর্ণ করেছেন তা তারা অপছন্দ করে, ফলে তিনি নিষ্ফল করে দেবেন তাদের সমস্ত আমল। |
47-10 : তারা কি পৃথিবীতে পরিভ্রমণ করে দেখতে পায়না, তাদের আগেকার (প্রত্যাখ্যানকারীদের) কী পরিণতি হয়েছিল? আল্লাহ্ তাদের ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। আর এই কাফিরদের জন্যেও রয়েছে একই পরিণাম। |
47-11 : এর কারণ, আল্লাহ্ মুমিনদের মাওলা (অভিভাবক), আর কাফিরদের কোনো মাওলা নেই। |
47-12 : যারা ঈমান এনেছে এবং আমলে সালেহ্ করেছে আল্লাহ্ তাদের দাখিল করবেন জান্নাতে, যার নিচে দিয়ে জারি থাকবে নদ - নদী - নহর। আর যারা কুফুরি করেছে, তারা মত্ত আছে ভোগ - বিলাসে এবং খায় জানোয়ারের মতো। জাহান্নামই হবে তাদের আবাস। |
47-13 : তোমাকে যে জনপদ থেকে তারা বের করে দিয়েছে তার চাইতে অনেক বেশি শক্তিধর কতো যে জনপদ ছিলো, আমরা তাদের ধ্বংস করে দিয়েছি, তাদের কোনো সাহায্যকারী ছিলনা। |
47-14 : যে ব্যক্তি তার প্রভুর পক্ষ থেকে প্রাপ্ত সুস্পষ্ট প্রমাণের উপর প্রতিষ্ঠিত, সে কি ঐসব ব্যক্তির সমতুল্য, যাদের কাছে নিজেদের মন্দ কর্মকান্ড মনে হয় চমৎকার এবং যারা দৌড়ায় নিজেদের কামনা - বাসনার পেছনে? |
47-15 : মুত্তাকিদের যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে তার দৃষ্টান্ত হলো, তাতে রয়েছে অনাবিল পানির নদ - নদী - নহর। রয়েছে দুধের নহর, যার স্বাদ কখনো পরিবর্তন হয়না। রয়েছে সুরা পায়ীদের জন্যে সুস্বাদু সুরার নহর। রয়েছে পরিশোধিত মধুর নহর। তাছাড়া সেখানে তাদের জন্যে থাকবে সব ধরনের ফলফলারি, থাকবে মাগফিরাত তাদের প্রভুর পক্ষ থেকে। এরা কি ওদের সমতুল্য, যারা চিরকাল জ্বলতে থাকবে জাহান্নামে, যাদের পান করানো হবে টগবগে ফুটন্ত গরম পানি, যা ছিন্ন ভিন্ন করে দেবে তাদের নাড়িভুড়ি? |
47-16 : তাদের মধ্যে এমন কিছু লোক আছে যারা তোমার কথা শুনে, তারপর তোমার কাছ থেকে বাইরে গিয়ে যাদের জ্ঞান দেয়া হয়েছে তাদের বলে: ‘এইমাত্র সে কী বললো?’ আসলে এরা সেইসব লোক, আল্লাহ্ যাদের অন্তর সীলমোহর করে দিয়েছেন এবং যারা নিজেদের কামনা - বাসনার পেছনে দৌড়ায়। |
47-17 : যারা হিদায়াতের পথ অবলম্বন করে, আল্লাহ্ তাদের ঈমান বৃদ্ধি করে দেন এবং তাদের দান করেন তাদের তাকওয়া। |
47-18 : তারা কি এ জন্যে অপেক্ষা করছে যে, আকস্মিক কিয়ামত তাদের উপর এসে পড়ুক? জেনে রাখো, কিয়ামতের লক্ষণ তো দেখা দিয়েছে। কিয়ামত এসে পড়লে কেমন করে গ্রহণ করবে তারা উপদেশ? |
47-19 : জেনে রাখো, আল্লাহ্ ছাড়া কোনো ইলাহ্ নেই। সুতরাং তুমি ক্ষমা প্রার্থনা করো তোমার এবং মুমিন পুরুষ ও নারীদের ত্রুটির জন্যে। আল্লাহ্ জানেন তোমাদের সব গতিবিধি এবং অবস্থান। |
47-20 : মুমিনরা বলে: ‘এমন একটি সূরা নাযিল হয়না কেন (যাতে যুদ্ধের নির্দেশ থাকবে?)’ তারপর যখন কোনো সুস্পষ্ট সিদ্ধান্তকর সূরা নাযিল হয়, যাতে যুদ্ধের নির্দেশ থাকে, তখন তুমি দেখবে, যাদের অন্তরে রোগ আছে তারা মরণের ভয়ে হতভম্ব মানুষের মতো তোমার দিকে তাকাচ্ছে। তাদের জন্যে উত্তম হতো |
47-21 : আনুগত্য করা এবং পজেটিভ কথা বলা। সুতরাং সিদ্ধান্ত যখন চূড়ান্ত হয়, তখন যদি তারা আল্লাহকে দেয়া অংগীকার পূর্ণ করতো, সেটাই হতো তাদের জন্যে কল্যাণকর। |
47-22 : তবে কি তোমরা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে দেশে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করবে? |
47-23 : এরা হলো সেইসব লোক, যাদের প্রতি আল্লাহ্ লানত করেন এবং যাদের বধির ও দৃষ্টিহীন করে দেন। |
47-24 : তারা কি কুরআন নিয়ে চিন্তা - গবেষণা করে না? নাকি তাদের অন্তর তালাবদ্ধ? |
47-25 : হিদায়াত সুস্পষ্ট হবার পর যারা তা পরিত্যাগ করে, শয়তান তাদের মন্দ কাজসমূহকে তাদের কাছে শোভনীয় করে তুলে ধরে এবং তাদের মিথ্যা আশা দেয়। |
47-26 : এর কারণ, আল্লাহ্ যা নাযিল করেছেন সেটা তারা অপছন্দ করে এবং তারা বলে: ‘আমরা কোনো কোনো বিষয় মেনে নেবো।’ আল্লাহ্ তাদের গোপন অভিসন্ধি অবগত আছেন। |
47-27 : তখন কেমন হবে, যখন ফেরেশতারা তাদের ওফাত ঘটাতে এসে মুখমন্ডল আর পিঠে কষাঘাত করতে থাকবে? |
47-28 : এর কারণ, তারা (সারাজীবন) সেই জিনিসের পেছনেই ছুটেছে যা আল্লাহকে করেছে অসন্তুষ্ট এবং তারা অপছন্দ করেছে সেই পথ যাতে আল্লাহ্ হতেন সন্তুষ্ট। ফলে তিনি নিষ্ফল করে দিয়েছেন তাদের সমস্ত কৃতকর্ম। |
47-29 : যাদের অন্তরে রোগ আছে তারা কি ধরে নিয়েছে যে, আল্লাহ্ কখনো তাদের মনের বিদ্বেষ প্রকাশ করে দেবেন না? |
47-30 : আমরা চাইলে তোমাকে তাদের পরিচয় দিয়ে দিতাম, ফলে লক্ষণ দেখলেই তাদের তুমি চিনতে পারতে। তবে তুমি অবশ্যি তাদের কথার ভংগিতে তাদের চিনতে পারবে। তাদের আমল সম্পর্কে আল্লাহ্ অবগত। |
47-31 : আমরা অবশ্যি তোমাদের পরীক্ষা করবো, যতোদিন না আমরা (বাস্তবে) জেনে নেবো তোমাদের মধ্যকার (প্রকৃত) মুজাহিদ ও সবর (দৃঢ়তা) অবলম্বনকারীদের। এ জন্যে আমরা তোমাদের অবস্থা পরীক্ষা করি। |
47-32 : যারা কুফুরি করে, মানুষকে আল্লাহর পথে আসতে বাধা দেয় এবং নিজেদের কাছে সঠিক পথ সুস্পষ্ট হবার পরও রসূলের বিরোধিতা করে, তারা কখনো আল্লাহর ক্ষতি করতে পারবে না। তিনি অচিরেই ধ্বংস করে দেবেন তাদের সমস্ত আমল। |
47-33 : হে ঈমানদার লোকেরা! তোমরা আনুগত্য করো আল্লাহর, আনুগত্য করো রসূলের এবং তোমরা বিনষ্ট করোনা তোমাদের আমল। |
47-34 : যারা কুফুরি করে এবং মানুষকে আল্লাহর পথে আসতে বাধা দেয়, তারপর কাফির অবস্থায় মারা যায়, তাদেরকে আল্লাহ্ কখনো ক্ষমা করবেন না। |
47-35 : তোমরা ভয় পেয়োনা এবং সন্ধির প্রস্তাব করোনা, তোমরাই উপরে থাকবে। আল্লাহ্ তোমাদের সাথে আছেন। তিনি কখনো তোমাদের আমল বিনষ্ট করবেন না। |
47-36 : দুনিয়ার জীবনটা তো একটা খেল তামাশা। তোমরা যদি ঈমান আনো এবং তাকওয়া অবলম্বন করো, তাহলে আল্লাহ্ তোমাদের পুরস্কার দেবেন। তিনি তোমাদের থেকে তোমাদের মাল - সম্পদ চান না। |
47-37 : তিনি যদি তোমাদের মাল - সম্পদ চাইতেন এবং সেজন্যে তোমাদের চাপ দিতেন, তাহলে তোমরা বখিলি করতে। তখন তিনি তোমাদের বিদ্বেষী মনোভাব প্রকাশ করে দিতেন। |
47-38 : হাঁ, তোমরাই তো তারা, যাদের আল্লাহর পথে ব্যয় করতে ডাকা হচ্ছে, অথচ তোমাদের কেউ কেউ বখিলি করছে। যারা বখিলি করে তারা তো বখিলি করে নিজেদের প্রতিই। আল্লাহ্ প্রাচুর্যশীল আর তোমরা হলে অভাবী। তোমরা যদি মুখ ফিরিয়ে নাও, তিনি তোমাদের বদলে অন্য লোকদেরকে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন, তারা তোমাদের মতো হবেনা। |