মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত সংখ্যা: ৯৮, রুকু সংখ্যা: ০৬এই সূরার আলোচ্যসূচি
|
19-1 : কাফ হা ইয়া আঈন সোয়াদ। |
19-2 : এটা তোমার প্রভুর রহমতের যিকির (বিবরণ), যা তিনি করেছিলেন তাঁর দাস যাকারিয়ার প্রতি। |
19-3 : যখন সে ফরিয়াদ করেছিল তার প্রভুর কাছে নীরবে নিভৃতে। |
19-4 : সে বলেছিল: ‘‘আমার প্রভু! আমার হাড়গোড় দুর্বল হয়ে গেছে, বার্ধক্যে আমার মাথার চুল শুভ্র - সাদা হয়ে গেছে। আমার প্রভু! তোমার কাছে ফরিয়াদ করে আমি কখনো খালি হাতে ফিরিনি। |
19-5 : আমি আমার পরে আমার উত্তরাধিকারী সম্পর্কে আশংকা করছি। এ দিকে আমার স্ত্রীও বন্ধ্যা। অতএব, তোমার পক্ষ থেকে তুমি আমাকে এমন একজন উত্তরাধিকারী দান করো, |
19-6 : যে আমার উত্তরাধিকারিত্ব করবে এবং ইয়াকুবের বংশেরও উত্তরাধিকারিত্ব করবে, আর হে প্রভু! তুমি তাকে বানাবে সন্তোষভাজন।’’ |
19-7 : (তার দোয়া কবুল করে আল্লাহ্ বললেন:) ‘হে যাকারিয়া! আমরা তোমাকে একটি পুত্র সন্তানের সুসংবাদ দিচ্ছি, তার নাম হবে ইয়াহিয়া। আগে আমরা এই নামে কারো নামকরণ করিনি।’ |
19-8 : সে বললো: ‘প্রভু! কেমন করে হবে আমার পুত্র, আমার স্ত্রী তো বন্ধ্যা, আর আমিও তো বার্ধক্যের শেষ সীমায় পৌঁছে গেছি।’ |
19-9 : তিনি (দূতের মাধ্যমে) বললেন: তুমি ঠিকই বলেছো। তবে তোমার প্রভু বলছেন: ‘এ কাজ আমার জন্যে একেবারেই সহজ। ইতোপূর্বে তো আমি তোমাকেও সৃষ্টি করেছি, অথচ তোমার কোনো অস্তিত্বই ছিলনা।’ |
19-10 : সে বললো: ‘প্রভু! (এর জন্যে) আমাকে একটি নিদর্শন দাও।’ তিনি বললেন, তোমার নিদর্শন হলো: ‘তুমি শারীরিক সুস্থ থাকা সত্ত্বেও তিন দিন কারো সাথে কোনো কথা বলবেনা।’ |
19-11 : অত:পর সে মেহরাব (কক্ষ) থেকে বের হয়ে তার কওমের কাছে এলো এবং ইশারা করে তাদের বললো: ‘তোমরা সকাল সন্ধ্যায় আল্লাহর তসবিহ্ করো।’ |
19-12 : (বলা হলো:) ‘হে ইয়াহিয়া! এই (তাওরাত) কিতাবকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরো।’ আর আমরা তাকে শৈশবেই দান করেছিলাম জ্ঞান ও প্রজ্ঞা, |
19-13 : আর আমরা তাকে দিয়েছিলাম আমাদের পক্ষ থেকে কোমলতা - নম্রতা আর পবিত্রতা এবং সে ছিলো তাকওয়ার অধিকারী। |
19-14 : সে ছিলো পিতা - মাতার প্রতি অনুগত। সে উদ্ধতও ছিলনা, অবাধ্যও ছিলনা। |
19-15 : তার প্রতি সালাম যেদিন তার জন্ম হয়েছিল, যেদিন তার মৃত্যু হবে এবং যেদিন সে পুনরুত্থিত হবে। |
19-16 : এই কিতাবের বর্ণনা অনুসারে মরিয়মের কথা যিকির (আলোচনা) করো। সে যখন তার পরিবার পরিজন থেকে আলাদা হয়ে পূর্ব দিকে এক স্থানে আশ্রয় নিলো, |
19-17 : এবং তাদের থেকে সে হিজাব (আড়াল) গ্রহণ করলো, তখন আমরা তার কাছে পাঠালাম আমাদের রূহকে (জিবরিলকে)। সে এসে তার কাছে পূর্ণ মানব আকৃতিতে নিজেকে প্রকাশ করলো। |
19-18 : সে (মরিয়ম) বললো: ‘আমি তোমার থেকে আল্লাহ্ - রহমানের আশ্রয় চাচ্ছি যদি তুমি মুত্তাকি হয়ে থাকো।’ |
19-19 : সে বললো: ‘(তোমার ভয়ের কোনো কারণ নেই) আমি তোমার প্রভুর রসূল (বার্তা বাহক), তোমাকে একটি পবিত্র পুত্র সন্তান দান করার (সংবাদ দেয়ার) জন্যে এসেছি।’ |
19-20 : সে বললো: ‘কী করে পুত্র হবে আমার, আমাকে তো কখনো কোনো পুরুষ স্পর্শ করেনি এবং আমি ব্যভিচারিণীও নই? |
19-21 : সে বললো: ‘তুমি ঠিকই বলেছো।’ তবে তোমার প্রভু বলেছেন: ‘এ কাজ আমার জন্যে খুবই সহজ এবং তাকে আমরা এ জন্যে সৃষ্টি করবো যেনো সে হয় মানুষের জন্যে একটি নিদর্শন, আর সে হবে আমাদের পক্ষ থেকে একটি রহমত, আর এ বিষয়টির ফায়সালা হয়েই আছে।’ |
19-22 : তখন সে তাকে গর্ভ ধারণ করে। পরে তাকে গর্ভে নিয়ে সে একটি দূরবর্তী স্থানে চলে যায়। |
19-23 : প্রসব বেদনা তাকে একটি খেজুর গাছের নীচে নিয়ে আসে। এ সময় (অপবাদের ভয়ে) সে বলে: ‘হায়, এর আগেই যদি আমার মৃত্যু হতো এবং আমি যদি মানুষের স্মৃতি থেকে মুছে যেতাম!’ |
19-24 : তখন সে তাকে নীচ থেকে ডেকে বললো: ‘‘দুঃখ করোনা, তোমার নীচে দিয়ে তোমার প্রভু একটি নহর সৃষ্টি করে দিয়েছেন। |
19-25 : আর তুমি তোমার দিকে খেজুর গাছের কান্ড নাড়া দাও, সেটি তোমার জন্যে তাজা পাকা খেজুর ফেলবে। |
19-26 : তা খাও আর পান করো এবং তোমার চক্ষু শীতল করো। কোনো মানুষ দেখতে পেলে বলবে: ‘আমি আজ রহমানের উদ্দেশ্যে চুপ থাকার সাওম পালনের মানত করেছি, তাই আজ আমি কারো সাথে কথা বলবোনা।’’ |
19-27 : অত:পর সে (মরিয়ম) তাকে (ছেলেটিকে) কোলে নিয়ে তার কওমের কাছে এলো। তারা বললো: ‘‘হে মরিয়ম। তুমি তো এক মহাকান্ড ঘটিয়ে এসেছো। |
19-28 : হে হারূণের বোন, তোমার পিতা তো কোনো খারাপ লোক ছিলেন না, তোমার মাও ব্যভিচারিণী ছিলেন না।’’ |
19-29 : মরিয়ম ছেলের প্রতি ইঙ্গিত করে (তাদেরকে ছেলের সাথে কথা বলতে বললো)। তারা বললো: ‘আমরা এতোটুকুন কোলের বাচ্চার সাথে কথা বলবো কিভাবে?’ |
19-30 : সে (কোলের শিশু ঈসা) বললো: ‘‘আমি আল্লাহর দাস, তিনি আমাকে কিতাব দিয়েছেন এবং নবী বানিয়েছেন, |
19-31 : আমি যেখানেই থাকিনা কেন, তিনি আমাকে কল্যাণময় বানিয়েছেন এবং তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, যতোদিন বেঁচে থাকি, আমি যেনো সালাত আদায় করি এবং যাকাত প্রদান করি। |
19-32 : তিনি আমাকে আরো নির্দেশ দিয়েছেন আমার মায়ের প্রতি অনুগত থাকতে। তিনি আমাকে স্বৈরাচারি এবং হতভাগা বানাননি। |
19-33 : আমার প্রতি সালাম, যেদিন আমি জন্ম নিয়েছি, যেদিন আমার মৃত্যু হবে এবং যেদিন আমাকে পুনরুত্থিত করা হবে।’’ |
19-34 : এ - ই হলো ঈসা ইবনে মরিয়ম। তার বিষয়ে এই হলো সত্য কথা, যা নিয়ে তোমরা সন্দেহ করছো |
19-35 : সন্তান গ্রহণ করা তো আল্লাহর কাজ নয়, এ থেকে তিনি মুক্ত পবিত্র। তিনি যখন কোনো বিষয়ের ফায়সালা করেন, তখন বলেন: ‘হও’, সাথে সাথে তা হয়ে যায়। |
19-36 : (ঈসা তাদের আরো বলেছিল:) ‘আল্লাহ্ই আমার প্রভু এবং তোমাদেরও প্রভু। সুতরাং তোমরা কেবল তাঁরই ইবাদত করো, এটাই সিরাতুল মুস্তাকিম - সরল সঠিক পথ।’ |
19-37 : তারপর বিভিন্ন দল (ঈসার বিষয়ে) মতানৈক্য সৃষ্টি করে। সুতরাং কাফিরদের জন্যে দুর্ভোগ মহাদিবসে উপস্থিতির দিন। |
19-38 : তারা যেদিন আমাদের কাছে উপস্থিত হবে, সেদিন সব কিছুই ঠিকভাবে শুনবে এবং দেখবে। কিন্তু আজ যালিমরা সুস্পষ্ট গোমরাহিতে নিমজ্জিত। |
19-39 : তাদেরকে দুঃখ ও অনুতাপের দিনটি সম্পর্কে সতর্ক করে দাও, সেদিন সব বিষয়ের ফায়সালা হয়ে যাবে। অথচ আজ তারা গাফলতির মধ্যে পড়ে আছে এবং ঈমান আনেনা। |
19-40 : আমরাই মালিক পৃথিবীর এবং পৃথিবীর উপর যারা আছে সবার এবং আমাদের কাছেই তাদের ফিরিয়ে আনা হবে। |
19-41 : এই কিতাবের বর্ণনা অনুযায়ী ইবরাহিমের কথা আলোচনা করো। সে ছিলো একজন সিদ্দীক (সত্যনিষ্ঠ) নবী। |
19-42 : সে তার পিতাকে বলেছিল: ‘‘বাবা! আপনি কেন এমন জিনিসের ইবাদত করেন যেগুলো দেখেওনা, শুনেওনা এবং আপনার কোনো উপকারেও আসেনা? |
19-43 : বাবা! আমার কাছে প্রকৃত জ্ঞান এসেছে, যা আপনার কাছে আসেনি। সুতরাং আপনি আমার অনুসরণ করুন, আমি আপনাকে সঠিক পথ দেখাবো। |
19-44 : বাবা! শয়তানের ইবাদত করবেন না। শয়তান তো রহমানের চরম অবাধ্য। |
19-45 : বাবা! আমি আশংকা করছি, আপনাকে রহমানের আযাব স্পর্শ করবে, তাতে আপনি শয়তানের অলি হয়ে পড়বেন।’’ |
19-46 : সে (ইবরাহিমের পিতা) বললো: ‘ইবরাহিম! তুমি কি আমার ইলাহ্দের (দেব দেবীদের) থেকে বিমুখ? তুমি যদি বিরত না হও, তাহলে আমি পাথর মেরে তোমাকে হত্যা করবো। তুমি চিরদিনের জন্যে আমাকে ত্যাগ করে চলে যাও।’ |
19-47 : ইবরাহিম বললো: ‘‘আপনার প্রতি সালাম। আমি আমার প্রভুর কাছে আপনার জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করবো, নিশ্চয়ই তিনি আমার প্রতি অনুগ্রহশীল। |
19-48 : আমি আপনাদের থেকে এবং আপনারা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের ডাকেন তাদের থেকে পৃথক হয়ে যাচ্ছি। আমি শুধু আমার প্রভুকেই ডাকবো। আমি আশা করি আমার প্রভুকে ডেকে আমি ব্যর্থকাম হবোনা।’’ |
19-49 : সে যখন তাদের থেকে এবং তারা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের ইবাদত করতো তাদের থেকে পৃথক হয়ে গেলো, তখন আমি তাকে দান করলাম (পুত্র) ইসহাক এবং (নাতি) ইয়াকুবকে। আর তাদের প্রত্যেককেই বানিয়েছিলাম নবী। |
19-50 : আর আমি তাদের দান করলাম আমার অনুগ্রহ এবং উঁচু করে দিলাম তাদের প্রশংসনীয় যশ - খ্যাতি। |
19-51 : এই কিতাবে মূসার কথা আলোচনা করো। সে ছিলো বিশেষভাবে মনোনীত এবং ছিলো একজন রসূল নবী। |
19-52 : আমরা তাকে ডেকেছিলাম তুর পাহাড়ের দক্ষিণ পাশ থেকে এবং নিভৃত আলোচনায় আমরা তাকে দিয়েছিলাম নৈকট্য। |
19-53 : আমাদের অনুগ্রহে আমরা তাকে (সাহায্যকারী) দিয়েছিলাম তার ভাই হারূণকে নবী হিসেবে। |
19-54 : এই কিতাবে স্মরণ করো ইসমাঈলের কথা। সে ছিলো প্রতিশ্রুতি পালনে সত্যনিষ্ঠ এবং ছিলো একজন রসূল নবী। |
19-55 : সে তার পরিবার - পরিজনকে নির্দেশ দিতো সালাত কায়েম এবং যাকাত প্রদানের আর সে তার প্রভুর কাছে ছিলো সন্তোষভাজন। |
19-56 : এই কিতাবে আলোচনা করো ইদরিসের কথা। সে ছিলো সিদ্দীক (সত্যনিষ্ঠ) নবী। |
19-57 : আমরা তাকে উঠিয়ে ছিলাম উচ্চ মর্যাদায়। |
19-58 : এরা হলো সেইসব লোক, যাদের প্রতি আল্লাহ্ অনুগ্রহ দান করেছেন আদমের বংশধর নবীদের থেকে এবং তাদের থেকে যাদেরকে আমরা আরোহন করিয়েছিলাম নূহের সাথে। এছাড়া ইবরাহিম ও ইসরাঈলের বংশধরদের থেকে এবং তাদের থেকে যাদেরকে আমরা হিদায়াত করেছিলাম এবং মনোনীত করেছিলাম। তাদের প্রতি যখন রহমানের আয়াত তিলাওয়াত করা হতো তারা কাঁদতে কাঁদতে সাজদায় লুটিয়ে পড়তো। (সাজাদা) |
19-59 : তাদের পরে আসলো এমন একটি উত্তর প্রজন্ম যারা বিনষ্ট করে দেয় সালাত এবং অনুগামী হয় কামনা - লালসার। তারা অচিরেই কুকর্মের শাস্তি ভোগ করবে। |
19-60 : তবে যারা তওবা করেছে এবং আমলে সালেহ্ করেছে, তাদেরকে দাখিল করা হবে জান্নাতে এবং তাদের প্রতি করা হবেনা কোনো যুলুম। |
19-61 : তাদের দেয়া হবে সেই স্থায়ী জান্নাত, যে অদৃশ্য (জান্নাতের) ওয়াদা দয়াময় রহমান তাঁর দাসদের দিয়েছেন। তাঁর ওয়াদা অবশ্যি বাস্তবায়িত হবে। |
19-62 : সেখানে ‘সালাম’ ছাড়া কোনো অর্থহীন কথাই তারা শুনবেনা। সেখানে সকাল সন্ধ্যাব্যাপী (অর্থাৎ সর্বক্ষণ) তারা পেতে থাকবে তাদের জীবিকা। |
19-63 : ওটা হলো সেই জান্নাত, আমরা যার ওয়ারিশ বানাবো আমাদের সেইসব দাসকে, যারা অবলম্বন করে তাকওয়া। |
19-64 : ‘‘আমরা আপনার প্রভুর নির্দেশ ছাড়া নাযিল হইনা। আমাদের সামনে ও পেছনে যা আছে এবং এ দুয়ের মাঝে যা আছে সবই তাঁর। আপনার প্রভু কখনো ভুলেন না। |
19-65 : তিনি মহাকাশ, পৃথিবী এবং এ দুয়ের মধ্যবর্তী সবকিছু রব (মালিক)। সুতরাং তাঁরই ইবাদত করুন এবং তাঁর ইবাদতে জমে থাকুন। আপনি কি তাঁর সমান গুণাবলি সম্পন্ন কাউকে জানেন?’’ |
19-66 : মানুষ বলে: ‘আমি যখন মরে যাবো, তখন কি আমি জীবিত অবস্থায় উত্থিত হবো?’ |
19-67 : মানুষ কি স্মরণ করেনা, আমরা তো ইতোপূর্বেও তাকে সৃষ্টি করেছি, যখন সে কিছুই ছিলনা। |
19-68 : তোমার প্রভুর শপথ! আমরা অবশ্যি তাদেরকে এবং শয়তানদেরকে হাশর করবো, তারপর নতজানু করে জাহান্নামের চারদিকে হাজির করবোই। |
19-69 : তারপর প্রত্যেক গোষ্ঠী থেকে যে দয়াময়ের প্রতি সবচেয়ে বেশি অবাধ্য ছিলো, তাকে খুঁজে বের করবোই। |
19-70 : তারপর তাদের মধ্যে জাহান্নামে প্রবেশের কে বেশি উপযুক্ত, তাকে তো আমরা জানিই। |
19-71 : তোমাদের প্রত্যেককেই তা (জাহান্নামের উপর স্থাপিত পুলসিরাত) অতিক্রম করতে হবে। এটা তোমার প্রভুর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। |
19-72 : পরে আমরা মুত্তাকিদের নাজাত দেবো এবং যালিমদের সেখানে (জাহান্নামে) নতজানু অবস্থায় ছেড়ে দেবো। |
19-73 : যখন তাদের প্রতি আমাদের সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করা হয়, তখন কাফিররা ঈমানদারদের বলে: ‘উভয় দলের মধ্যে কোন্টি মর্যাদার দিক থেকে শ্রেষ্ঠ এবং মজলিসের দিক থেকে উত্তম?’ |
19-74 : তাদের আগে আমরা কতো মানব প্রজন্মকে হালাক করে দিয়েছি, অথচ তারা ছিলো সম্পদে এবং বাহ্য দৃষ্টিতে শ্রেষ্ঠ। |
19-75 : হে নবী! বলো: যারা গোমরাহিতে আছে, দয়াময় রহমান তাদের অনেক অনেক ঢিল দিয়ে রাখেন, এমনকি তাদের যে বিষয়ে ওয়াদা দেয়া হয়েছে তা আসা পর্যন্ত, চাই তা শাস্তি হোক, কিংবা কিয়ামত। তখনই তারা জানতে পারবে কার মর্যাদা নিকৃষ্ট, আর কার দলবল অতিশয় দুর্বল? |
19-76 : আর যারা হিদায়াতের পথে চলে, আল্লাহ্ তাদের হিদায়াত বাড়িয়ে দেন। আর স্থায়ী পুণ্যের কাজই তোমার প্রভুর সওয়াব (পুরস্কার) লাভের জন্যে শ্রেষ্ঠ এবং প্রতিদান হিসেবেও শ্রেষ্ঠ। |
19-77 : তুমি কি ঐ ব্যক্তির প্রতি লক্ষ্য করেছো, যে আমাদের আয়াতের প্রতি কুফুরি করেছে এবং সে বলে: ‘অবশ্য অবশ্যি আমাকে অনেক অনেক মাল সম্পদ ও সন্তান সন্ততি দেয়া হবে (যদি আমাকে পুনরুত্থিত করা হয়)।’ |
19-78 : সে কি গায়েব অবগত হয়েছে, নাকি সে রহমানের নিকট থেকে অঙ্গীকার লাভ করেছে? |
19-79 : কখনো নয়, সে যা বলে তা তো আমরা লিখেই রাখছি এবং আমরা তার আযাব দীর্ঘ করতেই থাকবো। |
19-80 : সে যে বিষয়ের কথা বলে তার মালিক তো আমরা। সে আমাদের কাছে আসবে সম্পূর্ণ একাকী। |
19-81 : সে আল্লাহ্ ছাড়া অন্যদেরকে ইলাহ্ হিসেবে গ্রহণ করে, যাতে করে তারা তাদের জন্যে মর্যাদার কারণ হয়। |
19-82 : কখনো নয়, বরং তারা তাদের ইবাদত করেছে বলে অস্বীকার করবে, আর (সেদিন) তারা তাদের বিরোধী হয়ে যাবে। |
19-83 : তুমি কি লক্ষ্য করছোনা, আমরা কাফিরদের কাছে শয়তানদের পাঠিয়ে থাকি তাদেরকে মন্দ কাজে সুড়সুড়ি দেয়ার জন্যে। |
19-84 : সুতরাং তাদের ব্যাপারে তাড়াহুড়া করোনা। আমরা তো তাদের জন্যে নির্ধারিত সময়কাল (বা সংখ্যা) গুণে রাখছি। |
19-85 : যেদিন আমরা দয়াময় রহমানের কাছে মুত্তাকিদের হাশর করবো মেহমান হিসেবে, |
19-86 : আর অপরাধীদের পিপাসার্ত অবস্থায় তাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হবে জাহান্নামের দিকে। |
19-87 : সেদিন সুপারিশে কোনো কাজ হবেনা, তবে যে রহমানের নিকট অঙ্গীকার লাভ করেছে, তার কথা আলাদা। |
19-88 : তারা বলে: ‘রহমান সন্তান গ্রহণ করেছেন।’ |
19-89 : তোমরা এক জঘন্য বিষয় (রচনা করে) নিয়ে এসেছো। |
19-90 : এর ফলে মহাকাশ বিদীর্ণ হযে যাবে, পৃথিবী খন্ড বিখন্ড হয়ে পড়বে এবং পাহাড় পর্বত চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে পতিত হবে, |
19-91 : কারণ তারা রহমানের প্রতি সন্তান আরোপ করে। |
19-92 : সন্তান গ্রহণ করা রহমানের জন্যে শোভনীয় নয়। |
19-93 : মহাকাশ এবং পৃথিবীতে যারাই আছে, তারা রহমানের কাছে দাস হিসেবেই উপস্থিত হবে। |
19-94 : তিনি তাদের পরিবেষ্টন করে রেখেছেন এবং নিখুঁতভাবে গুণে রাখছেন। |
19-95 : কিয়ামতের দিন তারা সবাই তাঁর কাছে উপস্থিত হবে একা একা। |
19-96 : যারা ঈমান এনেছে এবং আমলে সালেহ্ করেছে, দয়াময় রহমান অচিরেই জনগণের মনে তাদের জন্যে ভালোবাসা সৃষ্টি করে দেবেন। |
19-97 : আমরা তোমার যবানে কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি এ উদ্দেশ্যে যে, তুমি এর মাধ্যমে সচেতন লোকদের সুসংবাদ দেবে এবং বিবাদপ্রিয় লোকদের সতর্ক করবে। |
19-98 : তাদের আগে আমরা বহু মানব প্রজন্মকে হালাক করে দিয়েছি। তুমি কি তাদের কাউকেও দেখতে পাচ্ছো, কিংবা তাদের কোনো ক্ষীণতম আওয়াযও শুনতে পাচ্ছো? |